হয়রানি ও ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে যাত্রী অধিকার দিবস

Passenger Voice    |    ১১:৩১ এএম, ২০২১-০৯-১৩


হয়রানি ও ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে যাত্রী অধিকার দিবস

দেশে যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য, পরিবহন বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, সড়ক দুর্ঘটনায় আজ প্রানহানি এখন নিয়মিত ব্যাপার। যাত্রীর স্বার্থ এখন পদে পদে ভূলুণ্ঠিত।

বেসরকারি খাতে পরিবহনগুলোতে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। যাত্রী অধিকার ও সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে অথবা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে প্রতিবাদ করলে যাত্রী সাধারণকে কথায় কথায় অপমানিত করা হচ্ছে।  

এক কথায় দেশের যাত্রী সাধারণ এখন কিছু দুর্বৃত্ত পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে যাত্রী অধিকারের বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের সামনে আনতে প্রতি বছর ১৩ সেপ্টেম্বর যাত্রী অধিকার দিবস পালন করে আসছে দেশের যাত্রী অধিকার ও সড়ক নিরাপত্তায় নিয়োজিত সামাজিক সংগঠনগুলো।

দেশে তৃতীয় বারের মতো যাত্রী অধিকার দিবস পালিত হচ্ছে। দেশের প্রতিটি নাগরিককে যে কোনো গন্তব্যে যাতায়াতের  জন্য গণপরিবহন ব্যবহার করতে হয়। সুতরাং প্রতিটি নাগরিকই কোনো না কোনো পরিবহনের যাত্রী। যদিও আমরা স্বল্প সময়ের জন্য পরিবহনের যাত্রী হই। এই সময়ে নিরাপদে যাতায়াত দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে অনন্য ভূমিকা পালন করে।  

গণপরিবহনে যারা খারাপ বহারের শিকার হয়, তারা কর্মস্থলে গিয়েও খিটখিটে মেজাজে অফিসের কাজকর্ম করতে গিয়ে সেবা প্রত্যাশীদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেন। ফলে জাতীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে গণপরিবহনে চাঁদাবাজি, নৈরাজ্যসহ নানা কারণে পরিবহন চালক-শ্রমিকেরা উগ্র মেজাজের হয়ে ওঠে। এতে সড়ক দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। যা জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি বিকশিত করার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হিসেবে বিবেচিত। সরকার পরিবহন সেক্টরের উন্নয়নে নানাবিধ কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে আসছে।  

শুধুমাত্র গণপরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে ও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা আটকে যাচ্ছি। সময়ের দাবির প্রেক্ষিতে কিছু মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজ থেকে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর আগে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি তরান্বিত করার পাশাপাশি যাত্রী সাধারণকে এসব অনিয়ম ও হয়রানি থেকে মুক্তির লক্ষ্যে প্রতিবাদী সংগঠন ‘বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি’ যাত্রা শুরু করে।

নানা প্রচেষ্টার ফলে, দেশের যাত্রী সাধারণ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে যাত্রী অধিকারের বিষয়টি সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে। গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ করতে ও সড়ক নিরাপত্তায় আমাদের ধারাবাহিক কার্যক্রমের ফলে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকেও নির্দেশনা এসেছে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারও সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার সর্বাত্মক আন্তরিক বলে আমরা মনে করি। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতায় যাত্রী স্বার্থ বার বার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। বিশৃঙ্খল পরিবহনের ফলে প্রতি বছর যানজটে হাজার কোটি টাকার শ্রম ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।  

দেশের অধিকার হারা যাত্রীদের প্রতিকী দিবস হিসেবে ১৩ সেপ্টেম্বরকে যাত্রী অধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। দিবসটিতে সারা পৃথিবীর অধিকার বঞ্চিত যাত্রী সাধারণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস হিসেবে ‘আন্তর্জাতিক যাত্রী অধিকার দিবস’ ঘোষণা করতেও জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

লেখক: মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী
মহাসচিব, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি